জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের স্নাতক পড়ুয়া ৭৫% শিক্ষার্থীর আর্তনাদ
লিখেছেন লিখেছেন মহসিন মাসরুর ২০ জুন, ২০১৩, ০১:২৩:৫০ দুপুর
যে প্রতিষ্টান বাংলাদেশের
সবচেয়ে বেশী ছাত্রছাত্রীকে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ করে দেয় তা হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রসংখ্যার দিক
থেকে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু তাই নয়, এই হিসাবে বিশ্বের ১ম পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
সুতরাং একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, শিক্ষিত
জনগোষ্টী তৈরীতে বাংলাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান
সবচেয়ে বেশী।
১৯৯২ সালে ৪৫০ টি কলেজ
নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়। হাটি হাটি পা পা করে দীর্ঘ ২১ বছরে আজ প্রায় তিন হাজার কলেজের অভিভাবক আমাদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে আমাদের জাতীয় সম্পদ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা না হয়ে তা আজ আমাদের
জাতীয় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম
শুনলে প্রথমেই যে জিনিসটি আমাদের হৃদয়পটে ভেসে উঠে তা হচ্ছে সেশনজট। সেশনজট খুরে খুরে খাচ্ছে দেশের স্নাতক পড়ুয়া প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন। চার বছরের অনার্স কোর্স শেষ হতে সময় লাগে প্রায় সাত বছর এবং এক বছরের মাস্টার্স কোর্স শেষ হতে সময় লাগে প্রায় তিন বছর। এতে অনেকক্ষেত্রেই মাস্টার্স পরীক্ষার ফল হাতে পাবার সাথে সাথেই একজন ছাত্রের বয়স ৩০ এর কোটা পার হয়ে যায়। তখন আর
সরকারী চাকরীর বয়স থাকে না।
তার মানে দাড়ায়, জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স
পাশ করা আর সরকারী চাকরীর
যোগ্যতা হারানো একই কথা। আর
ডিগ্রী পাস কোর্স যেন শিক্ষিত
বেকার তৈরীর প্রোগ্রাম। যার
ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্টান হওয়ার
পরিবর্তে মেধাবীদের
বৃদ্ধাশ্রমে পরিণত হয়েছে,
অথবা মেধাবীদের কারাগার
বললেও ভূল হবে না।
এই অভিশপ্ত সেশনজটের কারন
হচ্ছে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা,
ছাত্র-শিক্ষকের আপাদমস্তক
নোংরা রাজনীতি,
যথাসময়ে পরীক্ষা না নেওয়া,
পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন ও ফল
প্রকাশে অতিরিক্ত কালক্ষেপন।
প্রায় তের লাখ শিক্ষার্থীকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তত্ত্বাবধান করা সত্যিই দুঃসাধ্য, তা অস্বীকার করার উপায় নাই। সুতরাং এর বিকল্প হিসেবে দেশের
প্রত্যেকটি বিভাগে একটি করে বিভাগীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সকল কলেজকে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের
অধীনে পরিচালনা করা যেতে পারে। যা দীর্ঘদিন ধরে অনেকের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হলেও
কখনো আশ্বাস আবার কখনো ওজুহাত দেখিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। আর দেরীতে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের অজুহাত হচ্ছে যে বাংলাদেশে একটি মাত্র সরকারী ছাপাখানা 'বিজি প্রেস' সারাবছর ব্যস্ত থাকে। আর অনার্স পরীক্ষার সময় জেএসসি, এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষাসহ অন্যান্য গুরুত্বপুর্ন পাবলিক পরীক্ষা থাকায় একটি ছাপাখানার পক্ষে একই সময়ে এত প্রশ্ন ছাপানো সম্ভব হয় না।
ফলে পরীক্ষা নিতে অনেকটা দেরী হয়, যা নিতান্তই হাস্যকর। সরকার ইচ্ছা করলেই দেশের সর্ববৃহত শিক্ষাপ্রতিষ্টান জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য
আলাদা একটি ছাপাখানা প্রতিষ্টা করতে পারে। এতে যদি জাতীয়
বাজেটে শিক্ষাখাতের জন্য বরাদ্দ
টাকার স্বল্পতা দেখা দেয়,
তবে আমরা জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাদা তুলে ছাপাখানা প্রতিষ্টার জন্য সর্বদাই প্রস্তুত আছি।
পরিশেষে বলতে চাই, জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ
ছাত্রই মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত
পরিবারের সন্তান। সরকারের
সদিচ্ছা থাকলেই এই বৃহত্
জনগোষ্টীকে তাদের
শিক্ষাবন্দীদশা থেকে মুক্তি দিয়ে যথাসময়ে ছাত্রজীবনের
সমাপ্তি ঘটিয়ে কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ
দিতে পারে। যার ফলে একটি সুতি শাড়ী পরার জন্য সারাজীবন ধরে অপেক্ষমান একজন দরিদ্র
মা এবং একটি সাদা পাঞ্জাবীর
জন্য অপেক্ষমান একজন দরিদ্র
বাবার মুখে যেমনি হাসি ফুটবে,
তেমনি দেশকে দারিদ্রতা ও
বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত
করে একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
গড়া সম্ভব হবে।
বিষয়: বিবিধ
১০০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন